আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যানসহ তীব্র বিরোধিতা করছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এছাড়া সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইসির এ সিদ্ধান্তকে ভোট চুরির প্রকল্প বলে মনে করছে।

মঙ্গলবার দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ দলগুলোর সিনিয়র নেতারা এ মন্তব্য করেন। দলগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতা ইসির এ সিদ্ধান্তকে আমলে নিতে চান না। তারা বিষয়টিকে একরকম পাত্তা না দিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইসি কী করছে এবং কী করবে সেটি নিয়ে তারা ভাবছেন না। জনগণের ভোটাধিকার কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটিই তাদের কাছে মুখ্য বিষয়।

আরোও পড়ুন: বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে এসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণী

‘নতুন সময়সূচিতে অফিস শুরু’

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে সর্বাধিক ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার দুপুরে ইসির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেন, ‘দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনের ওপর সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছে কারচুপি করতেই ইভিএমে ভোটগ্রহণ করতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।’ প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ১৪ দলের শরিক সংসদ-সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন,

‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার পূর্বসূরিদের পথেই হাঁটছে, যা শুভ লক্ষণ নয়। এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিসের ভিত্তিতে ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট হবে-তা স্পস্ট করেনি ইসি। এটা পরিষ্কার বা খোলাসা করে বলা উচিত। তা না হলে নির্বাচনে কারসাজি করার যে বিতর্ক, তা থেকেই যাবে। নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শুরু থেকেই এ কমিশনের প্রতি আমাদের আস্থা নেই। কারণ, এরা সবাই সরকারের আজ্ঞাবহ। এদের বসানোই হয়েছে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। অনেকেই আমাদের বলেছিল ইসির সঙ্গে একটু কথা বলে দেখেন না। ওদের আচরণ ইতিবাচক মনে হচ্ছে। কিন্তু আমরা কেন কথা বলছি না সেটা আজ প্রমাণিত। ওদের চাকরিটাই হলো আওয়ামী লীগকে পুনরায় পাশ করানো।’

আরোও পড়ুন: বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে নতুন সময়সূচিতে অফিস শুরু

ভক্তদের জন্য দেবের নতুন চমক

আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এতদিন ইসি বলেছিল বেশিরভাগ দল ইভিএম চায় না। এখন উনারা নিজেরাই ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। আসলে তাদের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না। কারণ আগামী নির্বাচনে সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়নেই এ সিদ্ধান্ত।

ইভিএম দিয়ে চুরি করবে, বাকিটা অন্যভাবে নেবে। আমরা তো শুরু থেকেই বলছি-সরকার ভোট চুরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ইভিএম হচ্ছে সেটার অংশ। কারণ, ভোটারদের প্রতি ক্ষমতাসীনদের কোনো আস্থা নেই। সুষ্ঠু ভোট হলে পরিস্থিতি কি হবে তা তারা অনুমান করতে পারছে। তাই ভোট ডাকাতির মাধ্যমেই আবার ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তারা সরকারের দেখানো পথেই হাঁটবে। ইসিকে নিরপেক্ষভাবে হাঁটার সুযোগ তো সরকার দেয়নি। ইভিএম বাতিল করা হলো এটা বলার সাহস ইসির নেই। তাদের এটাই বলতে হবে। তারা করতে থাকুক তাদের কাজ আমরা করব আমাদের কাজ।’ তিনি বলেন, সরকারের পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে ইসির কিছু করার ক্ষমতা নেই। তারা সেটা করতেও পারবে না। সরকার যা চাইবে তারা সেটাই করবে।’